ঢাকাSaturday , 14 January 2023
আজকের সর্বশেষ সবখবর

হবিগঞ্জে বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্যামা প্রসন্ন দাশগুপ্ত’র ব্যবহৃত স্মারক হস্তান্তর

এম এ রাজা
January 14, 2023 8:22 pm
Link Copied!

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অকুতোভয় সৈনিক কালজয়ী এক মুক্তি সেনানী হলেন শ্যামা প্রসন্ন দাশগুপ্ত (বিধু বাবু)। মুক্তিযুদ্ধের কীর্তিমান এ বীরের স্মৃতির স্মরণে তাঁর ব্যবহৃত স্মারক আনুষ্ঠানিক ভাবে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

হস্তান্তর অনুষ্ঠানটি শনিবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে হবিগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর পাঠাগারে অনুষ্ঠিত হয়েছে। হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বিধু বাবুর পরিবারের পক্ষে ভারতী দাশগুপ্ত, তাপসী হক, ডাঃ সামন্তলাল সেন, শিবানী দে এস.পি দাশগুপ্ত, বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্যামা প্রসন্ন দাশগুপ্ত উপস্থিত ছিলেন।

হস্তান্তরিত বিধু বাবুর ব্যবহৃত জিনিস সমূহের মধ্যে ছিল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত তাঁর একটি গায়ের কালো রঙের শাল,মাথায় ব্যবহৃত একটি ক্যাপ, একটি কোর্ট ও পাঁচটি ছবি। এরমধ্যে একটি ছবি হচ্ছে উনার ছোটবেলার, আরেকটি একটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে তিনিসহ তার পরিবারের,আরেকটি ছবি হচ্ছে নবীগঞ্জ গোজাখাইর গ্রামে উনার সমৃদ্ধ বাড়ির ছবি, যে বাড়িটি পরবর্তীতে ধ্বংস করা হয়েছে।

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, রাজেন্দ্র চন্দ্র দাশ গুপ্ত, বীরমুক্তিযোদ্ধা উপাধ্যক্ষ মুহাম্মদ আবদুজ জাহেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা দীপেশ চন্দ্র দাশ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ধরনা সরকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজিয়া খাতুন, প্রেসক্লাব সভাপতি মোহাম্মদ নাহিজ, অসি তদন্ত মোঃ জামান, নবীগজ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি মৃনাল কান্তি মিনু, কমরেড মোহাম্মদ মাসুদ, সৈয়দ জাহির,সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী , হবিগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ট্রাস্ট্রিবোর্ডের সদস্য সাবেক অধ্যাপক ইকরামুল ওয়াদুদ।

মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্যামা প্রসন্ন দাশ গুপ্ত বিধুবাব এক কৃতিমান বীর পুরুষের নাম। এই অকুতোভয় দুঃসাহসী মানুষের জন্ম হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ গোজাখাইর গ্রামে।

২৫ মার্চের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আর্দশের সৈনিক এই বীর মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযুদ্ধ সংগঠকদের দায়িত্ব পালনে ব্রত হন। তার নেতৃত্ব। তার সাহসীকতা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নজরদারিতে থাকায় বিধু বাবুকে জীবিত বা মৃত্যু আটকের নির্দেশ আসে। কিন্ত জমিদার বাড়ির বিধু দমাবার পাত্র নয়। তিনি শুধু সংগঠকের দায়িত্বই পালন করেন নি।

নিরাপত্তা দিতে গ্রামবাসীর পাশে দাড়িয়েছেন, দুহাত ভরে যুদ্ধ বিধস্ত নিঃস্ব মানুষের সাহায্যে নিজের সম্পদ বিলিয়ে দিয়েছেন।বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন হলো। বাংলার মাটিতে মিশে গেলো জমিদার বিধু বাবু বসত ভিটা। জমিদার বিধু বাবু মাথা গোজাখাইর গ্রামে মাথা গোজার তিলপরিমান জায়গা রইল না।

একজন বিধু বাবু যার অনেক ত্যাগ। অনেক দেয়ার ইতিহাস মানুষের মুখে মুখে। কিন্তু তার নামটুকু আসেনি মহাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায়। তিনি ব্যক্তিত্ববান মানুষ ছিলেন। তিনি দাতা ছিলেন। শুধু দিয়েছেন কিছুই নেননি। তার বিরত্ব আমাদের কাছে তাকে মহত্ত্বম জীবন অনুসরণী করে রেখেছে।

আর এই বীরকে নতুন প্রজন্নের কাছে তুলে ধরতে। তার গ্রামের সবুজশ্যামল মাটে বেড়ে উঠা তুরুনদেরকে বিধুবাবুকে ত্যাগের কথা তুলে ধরতে আমরা ২০১৮ হতে কাজ করে আসছি।

সেই ধারাবাহিকতায় আজ বীর মুক্তিযোদ্ধা বিধুবাবু স্বজনরা শনিবার হবিগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে এসেছেন তাদের কাকার স্মৃতির স্মরণে তার যুদ্ধকালীন ব্যবহৃত শাল, প্রিয় টুপি, কোট ও বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ পারিবারিক স্হীরসহ বেশকিছু ছবি স্মারক হস্তান্তর করতে আসে বিধুবাবু ভাতিজি তাপসী হক ভারতী দাশ গুপ্ত, ডাঃ সামন্ত লাল সেন, শিবানী দেহ পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্যরা।

জাতীয় সংগীতের মূর্চনায় শুরু হওয়া স্মারক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে শহীদের স্মরনে নিরবতা পালন ও বিধুবাবুকে নিয়ে জীবন ঘনিষ্ট আলোচনা করেন উপস্থিত বক্তরা।

জাদুঘরের সদস্য সচিব ও প্রতিষ্ঠাতা আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী বলেন, আমরা হবিগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর হতে দৃঢ়কণ্ঠে বলতে চাই হবিগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাসের নির্জাসকে তুলে আনতে হবিগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর বদ্ধপরিকর’ আমাদের সীমাবদ্ধতা। আমাদের অনটন আছে। কিন্তু আমাদের ক্লান্তি নেই। আমাদের ভয় নেই। আমাদের লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট।

বিধুবাবুর ভাতুষপুত্র শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ণ ও সাজারী ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক সামন্ত লাল বলেন, হবিগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের পক্ষ হতে বিধুবাবু কে নিয়ে প্রথমবারের মত এই আয়োজন নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে সাহায্য করবে।

বিধু বাবুর ভাতিজি তাপসি হক বলেন বিধু কাকার নামটি তো মুছেই গিয়েছিল । কেয়া চৌধুরী ২০১৮ সালে কাকার নামে স্মৃতি স্তম্ভ ও একটি বিদ্যালয় ভবন স্হাপনে কাজ করেন। আমরা তার জন্য কৃতজ্ঞ।

ভারতী দাশ গুপ্ত বলেন বিধু বাবুর নাম মুক্তিযু্দ্ধের ইতিহাসে আছে কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় নেই। সাবেক অধ্যাপক ইকরামুল ওয়াদুদ বলেন, হবিগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এই ত্যাগী বীর মুক্তিযোদ্ধা যোদ্ধা তথ্য সংগ্রহে কাজ করছে।

সাবেক অধ্যক্ষ জাহানারা বেগমের সঞ্চলনায় বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজেন্দ্র দাশের সভাপতিত্বে আরো উপস্হিত ছিলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা দীপেশ চন্দ্র দাশ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ধরনী সরকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজিয়া খাতুন, বীর মুক্তিযোদ্ধা উপাদক্ষ মোহাম্মদ আবদুস জাহের, নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মৃণাল কান্তি মিনু, কমরেড মাসুদ আহমেদ, সৈয়দ জাহির,হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি মোহাম্মদ নাহিজ, সাবেক সভাপতি, দৈনিক এক্সপ্রেস সম্পাদক ফজলুর রহমান চৌধুরী, প্রথম আলো প্রতিনিধি, হাফিজুর রহমান নিয়ন, চ্যানেল আই জেলা প্রতিনিধি ফরিয়াদ চৌধুরী,সাংবাদিক নূরুদ্দিন আহমেদ, সুরুজ আলী, হাসিব চৌধুরী প্রমূখ।