হবিগঞ্জ জেলার গরু-ছাগলের হাটে ৮ গুন অতিরিক্ত হাসিল আদায় : ২শ টাকার হাসিল ১৮শ টাকা - আমার হবিগঞ্জ | Amar Habiganj
ঢাকাMonday , 31 January 2022
আজকের সর্বশেষ সবখবর

হবিগঞ্জ জেলার গরু-ছাগলের হাটে ৮ গুন অতিরিক্ত হাসিল আদায় : ২শ টাকার হাসিল ১৮শ টাকা

Link Copied!

হবিগঞ্জ জেলায় হালনাগাদকৃত সরকারী হাসিলের তালিকা না থাকায় গরু ছাগলের হাট-বাজার গুলিতে নিজেদের খেয়ালখুশি মতো হাসিল আদায় করছেন ইজারাদাররা।

সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী গবাদি পশুর হাটের প্রকাশ্য স্থানে হাসিল বা খাজনার রেট সম্বলিত চার্ট লাগিয়ে রাখার কথা থাকলেও হবিগঞ্জ জেলার কোন পশুর হাটে এ ধরনের চার্ট লাগানো নেই। ফলে ক্রেতা ও বিক্রেতা কেউই জানেন না হাসিলের সরকারি রেট কত। জেলার বিভিন্ন উপজেলার হাট-বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায় তারাও এ ব্যাপারে কোন সঠিক তথ্য জানেন না।

৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সালে হবিগঞ্জ জেলা স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক দিলীপ কুমার বণিক স্বাক্ষরিত সর্বশেষ হালনাগাদকৃত হাট বাজারের টোল চার্ট থেকে পাওয়া গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার হাসিলের মূল্য তালিকায় দেখা যায় বাস্তবতা বিবর্জিত ও অযৌক্তিক হাসিলের রেট।

তালিকায় প্রতি ১ শত টাকা বিক্রয় মূল্য থেকে ৭ টাকা ধার্য করা হয় হাসিল। এভাবে গরু, মহিষের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১৮ শত টাকা ও ছাগল, ভেড়ার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৪ শত টাকা পর্যন্ত আদায় করার অনুমতি দেয়া হয়।

অথচ দেশের অন্যান্য জেলার স্থানীয় সরকার বিভাগের দ্বারা তৈরিকৃত হাসিল রেট হচ্ছে, প্রতিটি গরু কিংবা মহিষের সর্বোচ্চ ২ শত থেকে ২ শত ৪০ টাকা পর্যন্ত, ছাগল ও ভেড়ার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ৭৫ টাকা।

এ বিষয়ে বগুড়া জেলা স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মোঃ মামুনুর রশিদের সাথে দৈনিক আমার হবিগঞ্জ পত্রিকার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বগুড়া জেলায় গরু-মহিষের হাসিল রেট সর্বোচ্চ ২ শত টাকা। তবে এটিকে এখন হালনাগাদ করে ২ শত ১০ কিংবা ২ শত ২০ টাকা করার কাজ চলছে। এছাড়া ২০১৭ সালে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এ বিষয়ক একটি প্রতিবেদনে মেহেরপুর জেলা প্রশাসক পরিমল সিংহ বলেন, ‘হাসিল আদায়-সংক্রান্ত পৌরসভার নীতিমালা আছে। সেই অনুযায়ী, গরুপ্রতি ২০০ ও ছাগলপ্রতি ৫০ টাকা হাসিল দেবেন ক্রেতা।

সরেজমিনে দেখা যায়, হবিগঞ্জ জেলার ১৪ টি স্থায়ী গবাদি পশুর হাটের ইজারাদার রা ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা গরু প্রতি হাসিল হিসেবে আদায় করছেন। ৩ শত থেকে ৫ শত টাকা আদায় করছেন ছাগল ও ভেড়া প্রতি। চুনারুঘাট উপজেলার আমুরোড গরু বাজার, বাহুবল উপজেলার মিরপুর গরু বাজার, হবিগঞ্জ পৌর গরুর বাজার, লাখাই উপজেলার বামৈ গরু বাজার, মাধবপুর উপজেলার চেঙ্গা গরু বাজার, মাধবপুর পৌর গরু বাজার, আজমিরীগঞ্জ উপজেলার আজমিরীগঞ্জ গরুর বাজার, নবীগঞ্জ উপজেলার জনতা বাজার, বানিয়াচং উপজেলার সহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার গবাদি পশুর হাট বাজার সরেজমিন অনুসন্ধান করে জানা যায় এ তথ্য।

চুনারুঘাট উপজেলার আমুরোড গরু বাজারে সরকারিভাবে খাস কালেকশনের ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসনের যৌথ ব্যবস্থাপনায় খাজনা আদায় করা হয়। এখানেও খাজনা আদায়ের চার্ট পাওয়া যায় নি।

গরু প্রতি ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা আদায় করা হয়। ক্রেতারা জানান তারা গরুর খাজনা যে এত কম সেটি জানতেনই না। খাজনা আদায়ের সাথে যুক্ত আহম্মদাবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আবদুস সালাম জানান, হাসিল এর চার্ট সরবরাহ করা হয়নি বিধায় এখনো এটি লাগানো হয়নি।

চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিদ্ধার্থ ভৌমিক এর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করে হাসলের রেট নির্ধারণ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান এটি নির্ধারণ করা তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। হাসিলের রেট ডিসি অফিস থেকে নির্ধারণ করে দেয়া হয়। তিনি জানান, হাট-বাজারের হাসিলের রেট লাগিয়ে দেয়া নিয়ম। কিন্তু তিনি দায়িত্বে আসার পর থেকে এখনো কোন হাসিলের তালিকা পাননি।

তিনি যোগ করেন, পহেলা বৈশাখ থেকে নতুন ইজারা দেয়ার সময় এ বিষয়গুলি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে পরামর্শক্রমে নির্ধারণ করা হবে। বাহুবল উপজেলার মিরপুর গরু বাজারে একই রকমভাবে কোন হাসিলের তালিকা পাওয়া যায়নি।

ইজারাদার আব্দুল মালেকের ইচ্ছামত হাসিল আদায় করা হচ্ছে। প্রতি হাজারে ৭০ টাকা করে খুচরা ক্রেতাদের নিকট থেকে হাসিল আদায় করা হয়। পাইকারদের নিকট থেকে গরুপ্রতি ১ হাজার থেকে ১৮ শত টাকা, ছাগল ও ভেড়া প্রতি ২ শত থেকে ৩ শত টাকা পর্যন্ত হাসিল আদায় করা চলছে।

এ বাজারের ক্রেতারা জানান তাদের অজ্ঞতাকে পুঁজি করে এভাবে উচ্চহারে হাসিল আদায় করছেন ইজারাদার। এ বিষয়ে ইজারাদার আবদুল মালেকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তিনি প্রায় ৩৬ লক্ষ টাকায় হাটটি ইজারা নিয়েছেন। এখনো পর্যন্ত হাসিলের কোন রেট উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক সরবরাহ করা হয় নি।

এ ব্যাপারে বাহুবল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহুয়া শারমিন ফাতেমার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, অনেক আগের একটি হাসিল রেট রয়েছে কিন্তু সেটি বর্তমান সময়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে এ অজুহাতে অতিরিক্ত হাসিল আদায় করছেন ইজারাদাররা। নতুন হাসিল রেট নির্ধারণ করার জন্য ইজারাদারদের কে প্রস্তাব পাঠাতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শীঘ্রই এসব বিষয়ে পর্যালোচনা করে যৌক্তিক হাসিল রেট প্রস্তাব আকারে হবিগঞ্জ জেলা স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠানো হবে।

জেলা পর্যায়ে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হাসিল রেট শীঘ্রই কার্যকর করা হবে। লাখাই উপজেলার বামৈ গরু বাজারে প্রতিটি গবাদিপশুর বিপরীতে বিক্রয় মূল্যের উপর ৫ থেকে ৭ শতাংশ হারে হাসিল আদায় করা হচ্ছে। যথারীতি এখানেও দৃশ্যমান স্থানে হাসিলের রেট টাঙ্গানো নেই। তবে এ হাটের ইজারাদার রেফাজুল ইসলাম জুয়েল জানান, উপজেলা প্রশাসন থেকে সরবরাহকৃত হাসিলের রেটের চেয়ে আরো কম পরিমান নেয়া হচ্ছে হাসিল।

এ বিষয়ে হবিগঞ্জ জেলা স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মোঃ নাজমুল হাসান জানান, হাসিলের রেট হালনাগাদ করা হয়নি অনেক বছর ধরে। ২০১২ সালে সর্বশেষ রেট হালনাগাদ করা হয়। উপজেলা হাট-বাজার কমিটিগুলোর এসব রেট নির্ধারণ করে দেয়ার কথা।

এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান জানান, হাসিলের রেট হালনাগাদ করার জন্য উপজেলা হাট বাজার কমিটি গুলিকে হাসিল রেট নির্ধারণ করে প্রস্তাব আকারে পাঠাতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাদের প্রস্তাব পর্যালোচনা করে সে অনুযায়ী যৌক্তিক হাসিল রেট নির্ধারণ করে দেয়া হবে।

এ বিষয়ে সচেতন মহল মনে করেন, এক দেশে দুই আইন হওয়ার কথা নয়। সারাদেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে হবিগঞ্জ জেলায় ও হাসিল রেট কার্যকর করা উচিত।