কথায় কথায় মামলা ঠুকে দেয়া, বাসা-বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, হিন্দু দেবত্তোর সম্পত্তি দখল, জমি দখল, সন্ত্রাসী হামলা, শিল্পাঞ্চল থেকে চাঁদাবাজি, মনোনয়ন বানিজ্য, প্রাইমারী শিক্ষক বানিজ্য, থানায় মামলার তদবীর ইত্যাদিতে সবকিছু যেন তার একক আধিপত্য ছিল।
আবু জাহির হবিগঞ্জ সদর উপজেলার রিচি ইউনিয়নের রিচি গ্রামে ১৯৬৩ সালের ৩ মার্চ জন্ম গ্রহন করেন। তার বাবা আমির আলী ছিলেন একজন.. । আনুমানিক ১৯৭৯ সালের দিকে হবিগঞ্জ শহরের রামকৃষ্ণ মিশন রোড এলাকার পুরাতন কৃষি ব্যাংক ভবনের মালিক আব্দুস সামাদ (আবু জাহিরের ফুফা) এর মালিকানাধীন আজিজ ছাত্রবাসে অবস্থান করে হবিগঞ্জ বৃন্দাবন সরকারি কলেজে লেখাপড়া করতেন আবু জাহির। ‘ছাত্র ইউনিয়ন’ নামে এক রাজনৈতিক সংগঠনের মাধ্যমেই রাজনৈতিক জীবনের উথান ঘটে তার।
এরপর ১৯৮০ সালে ছাত্রলীগে যোগদান করেন আবু জাহির। এরপর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মাধ্যমে যোগদান করেন আওয়ামী লীগে। হবিগঞ্জ শহরের রুপালী ম্যানশনের পেছনে রেজাউল মুহিত খানের মালিকানাধীন টিনসেটের বাসায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করে বাহুবল উপজেলার বড়গাঁও গ্রামের মৃত আব্দুল মন্নানের কন্যা আলেয়া আক্তারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সংসার শুরু করেন আবু জাহির। ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারী হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যার বাজার এলাকায় সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এসএম কিবরিয়া হত্যাকান্ডের পরই কপাল খুলে যায় তার। ২০০৮ সালে মহাজোটের প্রার্থী হয়ে হবিগঞ্জ-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আবু জাহির।
এরপরই শুরু হয় অমুক সাংবাদিককে বাদী করে তমুক সাংবাদিককে আসামী করে মামলা। অভিযোগ উঠে কথায় কথায় মামলা ঠুকে দেয়া, বাসা-বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, হিন্দু দেবত্তোর সম্পত্তি দখল, জমি দখল, সন্ত্রাসী হামলা, শিল্পাঞ্চল থেকে চাঁদাবাজি, মনোনয়ন বানিজ্য, প্রাইমারী শিক্ষক বানিজ্য, থানায় মামলার তদবীর ইত্যাদি। নামে বেনামে স্ত্রী-পুত্র এবং ব্যক্তিগত সহকারীর নামে জেলার বিভিন্নস্থানে ক্রয় করতে শুরু করেন সম্পত্তি। রীতিমত রাতারাতি কয়েক শত কোটি টাকার মালিক হয়ে যান আবু হাজির।
এদিকে, তার নানা অপকর্ম নিয়ে দৈনিক আমার হবিগঞ্জ পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করায় পর মারমুখী হয়ে উঠেন আবু জাহির এমপি। হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সায়েদুজ্জামান জাহিরকে বাদী করে আবু জাহিরের মানহানি করার অভিযোগ এনে হবিগঞ্জ সদর থানায় দায়ের করা হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা। এ মামলায় আসামী করা হয় পত্রিকাটির সম্পাদক ও প্রকাশক সুশান্ত দাস গুপ্তসহ বাকী তিন সাংবাদিককে। থানার মাধ্যমে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করে মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে জামিনে আসেন সবাই।
এরপর ২৫০ কোটি মানহানির অভিযোগ এনে একই পত্রিকার সকল সাংবাদিকদের আসামী করে আরও একটি মামলা দায়ের করেন আবু জাহির এমপির ব্যক্তিগত সহকারী সুদীপ দাস। দুটি মামলার সকল কার্যক্রম স্থায়ীভাবে স্থগিত করেন উচ্চ আদালত। সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হবার পরই ছাত্রলীগ, যুবলীগ, প্রাইমারী, হাইস্কুল এমনকি তার নির্বাচনী এলাকায় তার মনোনীত ব্যক্তিকে পদে বসাতে একক আদিপত্য বিস্তার করতে শুরু করেন আবু জাহির।
দলীয় নির্দেশনা না থাকার পরও স্ত্রী আলেয়া আক্তারকে নিয়ে অংশগ্রহন করেন হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের উপ-নির্বাচনে। হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর চৌধুরীকে কোনটাসা করে কৌশলে স্ত্রীকে চেয়ারে বসান তিনি।
সর্বশেষ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পরবর্তী আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা ৫ ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখে আবু জাহিরকে। এ সময় তার বাসা-বাড়িতে ভাংচুর, লুটপাট এবং অগ্নি সংযোগ করে তারা। একপর্যায়ে স্বপরিবারে আত্মগোপন করেন আবু জাহির।
