তারেক হাবিব ॥ বানিয়াচং উপজেলার পুকড়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য অরুণ দাস হত্যাকান্ড নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জণ। কেউ বলছেন গ্রামে আধিপত্য বিস্তার আবার কেউ বলছেন পরকিয়ার কারনেই হত্যা করা হয়েছে তাকে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে দৈনিক আমার হবিগঞ্জ পত্রিকার অনুসন্ধানী দল ঘটনাস্থলে সরেজমিনে গেলে বেরিয়ে আসে লোমহর্ষক তথ্য।
ছবিঃ অরুন মেম্বার বিবস্ত্র কেন এলাকাবাসীর প্রশ্ন!
জানা যায়, গত ১০ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২ টার সময় পার্শ্ববর্তী কবিরপুরে ধর্মীয় উৎসবে যোগ দিতে পুকরার নিজ বাড়ি থেকে বের হন মেম্বার। কিন্তু পরদিন ভোর বেলা পাশ্ববর্তী পুকুর পাড়ের গাছ বাগানে বিবস্ত্র ও এক চোখ উপড়ানো অবস্থায় তার মৃতদেহ দেখতে পান স্থানীয়রা। পরে বানিয়াচং থানায় খবর দিলে পুলিশ লাশ উদ্ধার ও সুরতহাল করে মর্গে প্রেরণ করে। এ ঘটনার পরের দিন ১২ ফেব্রুয়ারি নিহতের পুত্র অয়ন দাস বাদী হয়ে বানিয়াচং থানায় ৪ জনের নামসহ গং উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার দ্বায়ে পুলিশ এজাহার নামীয় আসামী একই গ্রামের মৃত ব্রজেন্দ্র সূত্রধরের পুত্র দীলিপ সূত্রধর (৩৫) ও মৃত প্রেমানন্দ সূত্রধরের পুত্র ইন্দ্র সূত্রধর (২৫) কে আটক করে গাড়িতে উঠান বানিয়াচং থানার ওসি রঞ্জন কুমার সামন্ত। পরক্ষনেই অজ্ঞাত কারনে ১নং আসামী দীলিপ সূত্রধরকে ছেড়ে দেয় পুলিশ এবং ৩নং আসামী ইন্দ্র সূত্রধরকে ২ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। রিমান্ডে উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য উদঘাটনে বানিয়াচং থানা পুলিশ ব্যর্থ হলে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে মামলাটি ‘‘পুলিশ বুরে্যা অব ইনভেস্টিগেশন’’ (পিবিআই) কে হস্তান্তর করে বানিয়াচং থানা পুলিশ।
মামলার সর্বশেষ অবস্থা জানতে ‘পিবিআই’ তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ ফরিদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দৈনিক আমার হবিগঞ্জকে জানান, সন্দেহজনক হিসেবে লাশ প্রাপ্তি স্থানের নিকটস্থ প্রাইমারি স্কুলের ‘কাজী নজরুল ইসলাম’ রুম থেকে প্রাপ্ত রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে ডিএনএ টেষ্টের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট আসলে বিস্তারিত জানা যাবে। তবে খুব শীঘ্রই মামলার ভাল অগ্রগতি হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
দৈনিক আমার হবিগঞ্জ পত্রিকার অনুসন্ধানী টিমের কাছে পুকড়া গ্রামের স্থানীয় কয়েকজন জানান, গত কয়েক বছর ধরে মেম্বার অরুণ দাসের সাথে স্থানীয় ৪০ উর্ধ্ব বিধবা নারীর সাথে পরকিয়ার বিষয়টি আঁচ করতে পেরেছিলেন তারা। প্রায় ১৫ বছর আগে স্বামী মারা যান ওই নারীর। সুযোগ পেলেই সময়ে-অসময়ে ওই মহিলার বাড়িতে যাতায়াত করতেন মেম্বার।
অরুন মেম্বার নিহত হওয়ার পরদিন থেকেই ওই বিধবা নারীর ২৫ বছর বয়সী পুত্র আত্মগোপনের বিষয়টি স্থানীয়দের কাছে ব্যাপক সন্দেহের কারণ সৃষ্টি করেছে। এ নিয়ে স্থানীয় কয়েকজন ধারণা করছেন যে, ঘটনার দিন কবিরপুর থেকে পুকড়া ফেরার পর স্থানীয় প্রাইমারী স্কুলের কাজী নজরুল রুমে বিবস্ত্র অবস্থায় ওই নারীর সাথে দেখে ফেলে বিধবার ২৫ বছর বয়সী পুত্র । এই সুযোগে বিধবা নারীর পুত্র ও তার সহযোগীরা এক চোখ উপড়ে শ্বাসরুদ্ধ করলে সেখানেই মৃত্যু হয় ইউপি সদস্য অরুণ দাসের। পরে মৃতদেহ ওই স্কুল রুম থেকে সরিয়ে প্রায় ৬’শ ফুট দূরে পুকুর পাড়ে ফেলে রাখা হয়। ঘটনাস্থল থেকে খুনিচক্রের ব্যবহৃত এক জোড়া স্যান্ডেল যার একটি ছেড়া, অরুন দাসের ব্যবহৃত ১ জোড়া স্যান্ডেল ও তার পরিহিত প্যান্ট, হাফ সোয়েটার, চাঁদর ইত্যাদি কাপড়-চোপড় উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহতের ছোট ভাই অর্জুন দাস ও মামলার বাদী পুত্র অয়ন দাস দৈনিক আমার হবিগঞ্জকে জানান, কেউ যদি এ হত্যাকান্ডের ব্যাপারে রহস্য উদঘাটনে গ্রহনযোগ্য কোন তথ্য-প্রমাণ প্রদান করতে পারেন তাহলে তাকে আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ৫(পাঁচ) লাখ টাকা পুরস্কার প্রদান করা হবে।
