রায়হান উদ্দিন সুমন , গোগ্রাপুর থেকে ফিরে : প্রতিষ্ঠার ১৩৮ বছর পর থেকে অদ্যাবধি বানিয়াচং উপজেলার কাগাপাশা ইউনিয়নের গোগ্রাপুর গ্রামে ১৮৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত গোগ্রাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এখনো জরাজীর্ণ অবস্থায় চরম অবহেলিত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে । বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে একটি টিনের দু’চালা ঘরের জায়গা প্রদান করেন ওই গ্রামের শুভেন রায়ের পরিবার। বর্তমানে জরাজীর্ণ টিনের ঘরেই দু’শিফটে ৯৩ জন ছাত্রছাত্রী লেখাপড়া করে।

ছবি : বানিয়াচং উপজেলার ৬নং কাগাপাশা ইউনিয়নের গোগ্রাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টিনশেড ঘর । ভবন না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম
এই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ সহকারি শিক্ষক রয়েছেন মোট ৪জন। এর মধ্যে দুইজন মহিলা। প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র না থাকায় প্রথম শিফটে ৫০ জন, দ্বিতীয় শিফটে বাকি শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হয়। এই প্রতিষ্ঠানটি যুগের পর যুগ নানা বৈষম্য ও শ্রেণী সংকটে ব্যাহত হচ্ছে গোগ্রাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম।
এদিকে স্থায়ী পাকা ভবন নির্মাণ না হওয়ায় এই টিনের ঘরে গাদাগাদি করে কোনো রকম পড়ালেখা চালিয়ে আসছে ওই গ্রামের শিক্ষার্থীরা। স্থানীয়রা জানান, প্রতিষ্ঠার ১৩৮ বছর পর থেকে অদ্যাবধি এই বিদ্যালয়ের পাকা ভবনের জন্য আক্ষেপ রয়ে গেলো। দীর্ঘদিন ধরে এই অবস্থায় পাঠদান কার্যক্রম চললেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিরব ভূমিকা পালন করছেন। এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গ্রামবাসী একাধিক বার দাপ্তরিকভাবে যোগাযোগ করলেও আশার আলো দেখছেন না।

ছবি : দৈনিক আমর হবিগঞ্জ পত্রিকার সরেজমিনে পরিদর্শনের সময় এলাকাবাসীদের সাথে মতবিনিময় সভা
প্রায়ই শুনা যায় নতুন ভবনের জন্য টেন্ডার আহŸান করা হয়েছে। কিন্তু স্থান নির্ধারণ না করার ফলে আটকে থাকে ভবন নির্মাণ। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, বিদ্যালয়ে আসবাবপত্রের মধ্যে রয়েছে ৪টি চেয়ার ও ৩ জোড়া বেঞ্চ। কোনো টেবিল নেই। আলমিরা না থাকায় সম্প্রতি ¯িøপের টাকা দিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক টিন, বাঁশ ও কাঠ দিয়ে একটি বাক্স তৈরী করেন। ওই বাক্সে বিদ্যালয়ের খাতাপত্র, চক ও ডাষ্টারসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র রাখা হয়।
এছাড়া পায়খানা না থাকার কারণে শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হন। তবে সেখানে একটি টিউবওয়েল থাকলেও সেটার অবস্থা আরো শোচনীয়। পানি তুলতে সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হয়। শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা করার জন্য মাঠ তো দুরের কথা নেই শহীদ মিনারও।
গ্রামবাসীর দাবি বিদ্যালয়ে সরকার একটি পাকা ভবন তৈরী করে দিলে তাদের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি কিছুটা কমবে। সেই সাথে শিক্ষার্থীরা নিশ্চিন্তে পাঠদান চালিয়ে যেতে পারবে। মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ক্লাস করছে কোমলমতি ছেলেমেয়েরা। অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা পরিবেশে শিশুরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে এমন অভিযোগ জানিয়েছেন অভিভাবকরা। গোগ্রাপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা নিরঞ্জন দাস বলেন, বর্তমান ডিজিটাল যুগে টিনের দু’চালা ঘরে এমন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় বর্তমান সময়ে কোথাও আছে কি-না আমার জানা নেই।

ছবি : গোগ্রাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টিনশেড ঘর ।
ভবন স্থানান্তরের জন্য অনুমোদন প্রায় ২ বছর আগে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এনে দিয়েছিলেন। কিন্তু কি এমন কারণে আজ পর্যন্তও এই ভবন নির্মাণ হয়নি তা আমার বোধগম্য নয়। বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা প্রিয়াঙ্কা রানী রায় বলেন, বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার যেমন ভাল রাস্তা নেই, তেমনি পাঠদানের জন্য রয়েছে দুই রুম বিশিষ্ট একটি টিনশেড নড়বড়ে ঘর। এর মধ্যে এক রুমে বিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কার্যক্রম আর অন্য রুমে নেয়া হয় শুধুমাত্র ৫ম শ্রেণীর ক্লাস। শিক্ষার মান উন্নয়নে স্কুলে রাস্তাসহ নতুন ভবন নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
এই বিষয়ে গোগ্রাপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোপিকা রঞ্জন দাস জানান, বিদ্যালয়ে আছে বলতে কিছুই নেই। যা আছে গ্রামবাসীর সহায়তায় একটি দু’চালা টিনের ঘর। তবে এটা একবার টেন্ডার হয়েছিল। কাজ পেয়েছিলেন বানিয়াচং উপজেলা যুবলীগের সহ-প্রচার সম্পাদক আসাদুজ্জামান খান তুহিন নামে এক ঠিকাদার। পরবর্তীতে কাজ পেলেও মাটি ভরাটের কাজ দরপত্রে উল্লেখিত পরিমাণের চেয়ে বেশি হতে পারে ভেবে কাজটি ফেলে চলে আসেন ঠিকাদার আসাদুজ্জামান খান তুহিন।

ছবি : বানিয়াচং গোগ্রাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই টিনশেড ঘরে ই চলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম
ইদানিং যতুটুকু জানি নতুন করে মাটি ফালানোসহ টেন্ডার আহবান করা হবে। বানিয়াচং ৬নং কাগাপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সেক্রেটারি এরশাদ আলী জানান, বিদ্যালয়ের জায়গা জটিলতার কারণে এতো দিন ভবন নির্মাণ সম্ভব হয়নি। আশা করি এবার টেন্ডারের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে এই বিদ্যালয়ের নতুন ভবন।
বানিয়াচং উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম সরকারের সাথে কথা হলে তিনি জানান, এই বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের জন্য প্রস্তাবনাই এখন তৈরী হয়নি। প্রস্তাবনা আকারে আসলে তারপর টেন্ডারের জন্য আহবান করা হবে।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় উপজেলা প্রকৌশলী মিনারুল ইসলামের সাথে। তিনি জানিয়েছেন, উপর মহলের সাথে কথা বলে নতুন ভবনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।