মোঃ হাসান চৌধুরী নবীগঞ্জ থেকেঃ আগামী ২৮ই নভেম্বর নবীগঞ্জ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে । তন্মধ্যে সদর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন ৭ জন প্রার্থী।নবীগঞ্জের সদর ইউনিয়নের এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীর ৭ জনের মাঝে ৩ জনের মাঝে লড়াই হবে বলে ধারনা সাধারন ভোটারদের। সদর ইউনিয়ন শহর ঘেষে হওয়ার কারনে এই ইউনিয়ন নিয়ে শহরের চায়ের দোকানে আলোচনা সমালোচনা বেশি হয়।
এবারের নির্বাচনে যে ৩ জন প্রার্থীকে নিয়ে আলোচনা বেশি হচ্ছে তারাই সবাই তরুণ প্রজন্মে প্রতিনিধি। সবচেয়ে আলোচনার র্শীষে রয়েছেন বিএনপির ঘরোয়া রাজনীতির একক প্রার্থী জাকির আহমদ চৌধুরী। বর্তমান চেয়াম্যান উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক জাবেদুল আলম চৌধুরী সাজু, উপজেলা যুবলীগের আহবায়াক উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল হক চৌধুরী সেলিমের ভাতিজা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরী আপন ছোট ভাই ও সাবেক পৌর মেয়র তোফাজ্জল ইসলাম চৌধুরীর মামাতো ভাই।

ছবি : নবীগঞ্জের সদর ইউনিয়নে এই ৩ তরুণের মধ্যে মূলত লড়াইটা হবে বলে আছ করা গেছে
বর্তমান চেয়ারম্যান জাবেদুল আলম চৌধুরী সাজু ভিজিএফের চাল আত্নসাত এর দায়ে ৩ মাস বহিষ্কৃত ছিলেন। এরপর তিনি হাইকোর্টে রিট করে স্বপদে বহাল হন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে ৭৫ লক্ষ টাকা ছিনতাই, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে হত্যার হুমকিসহ অসংখ্য মামলা ও ইউনিয়নের প্রজেক্ট,প্রকল্পে অনিময় ও কারচুপি স্বজনপ্রীতির অভিযোগ কোর্টে এবং বিভিন্ন দফতরে বিচারাধীন রয়েছে।
বিগত নির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে ধানের শীষ প্রতীকের মনোনীত চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল মুক্তাদ্দির চৌধুরীকে অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে ১ম বারের মত চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এবারের নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ার কারন হিসাবে তার ভিজিএফের চাল আত্নসাত অনিয়মও মামলা মোকদ্দমা কাল হিসাবে দোষারোপ করচ্ছেন আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরী ও উপজেলার চেয়ারম্যান ফজলুল হক চৌধুরী আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করার লিখিত অভিযোগ জেলা আওয়ামী লীগের কাছে করেছেন হাবিবুর রহমান হাবিব। নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্য মিছিলে বক্তব্য দিয়েছেন উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরী তার আপন ছোট ভাই জাবেদুল আলম সাজুর পক্ষে ভোট চাইতে গিয়ে প্রচারনা সভায় নবীগঞ্জ- বাহুবল আসনের এমপি শাহ নেওয়াজ মিলাদ গাজী,জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক এডভোকেট আলমগীর চৌধুরীকে নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করেন।
গত পৌর নির্বাচনে অল্প ভোটে পরাজিত গোলাম রসূল চৌধুরী রাহেলসহ দলীয় অংসখ্য নেতাকর্মীকে তিনি দোষারোপ করে জনসম্মুখে গালি গালাজ করার অডিও রেকড সামাজিক যোগাযোগে ভাইরাল হওয়ায় পর তার বিরুদ্ধে দলীয় হাই কমান্ড কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না তা নিয়ে হতাশ দলীয় নেতাকর্মীরা।
বর্তমান চেয়ারম্যান সাজুর আরেক বড় ভাই রেজা আহমদ চৌধুরী অস্ত্র মামলার যাবত জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী ছিলেন। অনেক বছর হাজত বাসের পর তিনি জামিনে আসেন । বর্তমানে উপজেলা কৃষকলীগের ১ম যুগ্ম আহবায়ক তিনি। তার ভাইয়ের পক্ষে প্রচারানায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ দলীয় নেতাকর্মীকে অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করার অভিযোগ উঠেছে।
আওয়ামীলীগের মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার পরেও তাকে নৌকার মাঝি না দেওয়ায় সে আওয়ামীলীগের বিদ্রোর্হী প্রার্থী হয়ে এবারের নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেছে। তবে আওয়ামীলীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক ও বর্তমান পৌর যুবলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক হাবিবুর রহমান হাবিরের বিরুদ্ধে ও ছাত্রলীগ নেতা হেভেন চৌধুরীর হত্যা মামলা নবীগঞ্জ উপজেলায় সাবেক উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তাকে নাজেহাল ও বিভিন্ন মামলা মোকদ্দমা রয়েছে।
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির সাবেক ছাত্র নেতা মোঃ জাকির আহমদ চৌধুরী (মোটর সাইকেল), আওয়ামী লীগের বিদ্রোর্হী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান জাবেদুল আলম চৌধুরী সাজু (আনারস),স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ আতাউর রহমান চৌধুরী (ঘোড়া),জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী মোঃ মুফতি মিয়া(লাঙ্গল), স্বতন্ত্র প্রার্থী খাজা শফী ওসমানী খাকী চৌধুরী (চশমা), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী হাফেজ কাজী রোহামা উর রশীদ চৌধুরী (হাত পাখা) প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে লড়ছেন।
এ ইউনিয়নে মোট ভোটার হচ্ছেন ১৫ হাজার ১৭৯ জন। তন্মধ্যে পুরুষ ৭ হাজার ৪৫৯ জন ও মহিলা ৭ হাজার ৭২০ জন। ইতিমধ্যে প্রার্থীদের প্রচারনায় সরগরম হয়ে উঠেছে নির্বাচনী এলাকা। মাইকিং পোস্টার লিফলেট চেয়ে গেছে নির্বাচর্নী এলাকার হাট বাজার। প্রত্যেক প্রার্থী এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। প্রচারণায় ৭ জনই সমানে সমান।
ভোটের দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই পাল্টে যাচ্ছে ভোটের হিসাব নিকাশ। আওয়ামীলীগের হেভিওয়েট ২ জনই প্রার্থী এখানে নির্বাচন করায় বর্তমানেই সাধারন ভোটারদের আস্থা। সাধারন ভোটার মনে করচ্ছেন ভোটে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব (নৌকা),স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ জাকির আহমদ চৌধুরী (মোটর সাইকেল)ও আওয়ামীলীগের বিদ্রোর্হী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান জাবেদুল আলম চৌধুরী সাজু (আনারস), লড়াই হবে।
বিএনপির দলীয় নের্তাকর্মী বেশি উপজেলা ও পৌর বিএনপির সকল ইউনিটের নেতাকর্মীরা যে ভাবে জাকির আহমদ চৌধুরীর জন্য ভোটের মাঠে দিন রাত প্রচারানার কাজে ব্যস্ত সময় পার করচ্ছেন নির্বাচনের আগ মহুর্ত পর্যন্ত নিরসল কাজ অব্যাহত রাখলে জাকির আহমদ চৌধুরী ১ বারের মত চেয়ারম্যন নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে ভোটাদের সাথে কথা বলে জানা যায়। এবারের নির্বাচনে নৌকার প্রতীক নিয়ে দলীয় প্রার্থী মনোনীত হয়ে নির্বাচন করছেন হাবিব।
এ ইউনিয়নের মূল লড়াই হবে চৌধুরী সাজু (আনারস), আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ জাকির আহমদ চৌধুরী (মোটর সাইকেল) আওয়ামীলীগের বিদ্রোর্হী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান জাবেদুল আলম সাজুর (আনারস)মার্কার। প্রার্থীদের অব্যাহত প্রচারণায় দিন দিন বদলে যাচ্ছে ভোটের সমীকরন।
আওয়ামীলীগের দলীয় নেতা কর্মীরা দলের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে মাঠে ময়দানে কাজ করে যাচ্ছেন দিন-রাত। গ্রাম,পাড়া-মহল্লা চষে বেড়াচ্ছেন প্রার্থীরা ভোর হতে মধ্যরাত পর্যন্ত। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত প্রচারণায় এবং জনমতে এগিয়ে আছেন জনগনের ভালবাসায় মনোনীত এবং বিএনপির রাজনীতির একক স্বতন্ত্র প্রার্থী তরুন সমাজ সেবক মোঃ জাকির আহমদ চৌধুরী। তার সাথে তুমুল লড়াই হবে হাবিবের নৌকা ও সাজুর আনারস মার্কার। ভোটারদের সাথে আলাপ করে এমন তথ্য পাওয়া যায়।
ভোটাররা বলছেন অবাধ সুষ্টু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে স্বতন্ত্র প্রার্থী ক্লিন ইমেজের অধিকারী জাকির আহমদ চৌধুরী মোটর সাইকেলের সাথে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব নৌকা, আওয়ামীলীগের বিদ্রোর্হী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান জাবেদুল আলম চৌধুরী সাজু আনারস এর লড়াই ইতি মধ্যেই জমে উঠেছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ আতাউর রহমান চৌধুরী (ঘোড়া),জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী মোঃ মুফতি মিয়া(লাঙ্গল), স্বতন্ত্র প্রার্থী খাজা শফী ওসমানী খাকী চৌধুরী (চশমা), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী হাফেজ কাজী রোহামা উর রশীদ চৌধুরী (হাত পাখা) প্রচার প্রচারনায় থেমে নেই।
সাধারণ ভোটারদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, এ ইউনিয়নে প্রতিদ্বন্দী ৭ জনই নিরসভাবে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে সরকার দলীয় প্রতীক (নৌকা)ও জনগনের আস্থা ও ভালবাসায় স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ জাকির আহমদ চৌধুরী মোটর সাইকেল, আওয়ামী লীগের বিদ্রোর্হী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান জাবেদুল আলম চৌধুরী সাজু আনারস রয়েছেন আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে। ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে উৎসব আমেজে ভোট হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ভোটারা।
আগামীকাল থাকছে নির্বাচনী হালচাল বাউশা ইউনিয়ন নিয়ে ৯ম পর্ব।