সৈয়দ হাবিবুর রহমান ডিউক : পাহাড়ের কোল ঘেঁষা সুতাং নদী এককালের খরস্রোতা। নদীর জোয়ারে পাড় উপচে পানি বেরিয়ে যেত। কালের আবর্তনে নদীর ঐতিহ্য এখন হারিয়ে যাচ্ছে। যে নদীতে বছরের বেশির ভাগ সময়ই পানি থাকত। নদী পাড়ের মৎস্যজীবীরা মনের আনন্দে মেতে উঠতেন মাছ শিকারে। চাল্লাইর বিলের কৈ আর সুতাংয়ের পুঁটি মাছের কথা এলাকা সবার জানা ছিল। কিন্তু এখন সেই নদীতে মাছ তো দূরের কথা, পানি থাকছে না। নদীর তলদেশ পর্যন্ত শুকিয়ে যাচ্ছে।
অনেকদিন ধরে নদী খনন হয়নি, এ পাহাড়ের বুকে হওয়ায় পাহাড়ের পাড় ভেঙে নদীতে পড়ছে। ফলে নদীর পানি শুকিয়ে যাচ্ছে সময়ে-অসময়ে। আর এলাকার ভূমিহীন কৃষক নদীর বুকে ধানের চারা থেকে শুরু করে রীতিমতো ধান রোপণ করে যাচ্ছেন। নদীজুড়ে এখন সবুজে সমারোহ। যে নদীতে মাছ ধরতো এলাকার মানুষ সেই নদীতে এখন চাষাবাদ করছে। সরেজমিন সুতাং নদী ঘুরে দেখা যায়, মৎস্যজীবীরা জালের পরিবর্তে নদীতে চাষাবাদ নিয়ে ব্যস্ত বছরের আশ্বিন মাসে জমিতে আউশ ধান থাকায় বোরো ধানের চারা লাগানোর জায়গা থাকে না। আর আশ্বিন মাসে পানিও শুকিয়ে গিয়ে নদীর ২ বুকে চর জাগে। তাই ভূমিহীন কৃষকরা নদীর বুকে জমি তৈরি করে আবাদযোগ্য করে গড়ে তোলেন। কার্তিক মাসে বোরো ধানের চারা লাগানো হয় এবং পৌষ মাস পর্যন্ত চারা নদীতেই থাকেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুতাং নদীর উভয় পাড়ের ৫-৭ গ্রামের ভূমিহীন কৃষকরা নদীর পানি শুকিয়ে গেলে নদীর চর ধানের চারা ও বোরো ধান লাগানোর জন্য কাজে লাগান।
খননের অভাবে মরতে বসেছে হবিগঞ্জের সুতাং নদী খননের অভাবে মরতে বসেছে হবিগঞ্জের সুতাং নদী।হারিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পরিবেশ হচ্ছে মৃত্যু এ নিয়ে যেন কারো মাথাব্যথা নেই। চোখের সামনে প্রকাশ্যে হবিগঞ্জ জেলার ঐতিহ্যবাহী সুতাং নদীটিতে পলিমাটি পড়ে ভরাট হয়ে অকালে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নদীর দুই পাড়ে জেগে উঠা বালুচরে চাষাবাদ করছেন অনেক কৃষক।
বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের পানি ধারণ করতে পারে না নদীটি। ফলে দুই কূল উপচে ভাসিয়ে দেয় ফসলি জমি। এতে শাক-সবজিসহ ধানের জমি ডুবে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। বর্তমানে সুতাং নদীর উপর দিয়ে পায়ে হেঁটেই পার হওয়া যায়।
অপরিকল্পিতভাবে সুতাং নদী থেকে বালু উত্তোলন করায় চুনারুঘাটের পাইকপাড়া, দেওড়গাছ ও শানখলা ইউনিয়নের প্রায় ১৩টি গ্রাম, দেউন্দি ও লাল চান্দ চাবাগানের ভূমি উর্বরতা হারাতে চলেছে। এমনকি শায়েস্তাগঞ্জ-দেউন্দি চাবাগানের সুতাং নদী সেতু দেবে গেছে। জানা যায়, কোন কোন দলের নেতারা অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করছে। তারা কোন বাঁধাই মানছে না। একদিকে নদী ও সেতু ভাঙ্গঁন অন্যদিকে বালুতে জমি ভরে যাওয়ায় নানা শংকায় দিন কাটাচ্ছে ১৫ হাজার কৃষক ও ২ হাজার চা শ্রমিক পরিবার। কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না। এদিকে প্রতিদিন নদীপাড়ে একাধিক শক্তিশালী মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। নদীর তলদেশ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় চা বাগান এলাকায় কয়েকটি কালভার্ট ধ্বসে গেছে।
শীঘ্রই নদীটি খনন করলে সুতাং নদীটি রক্ষা পাবে। রক্ষা পাবে এলাকার পরিশেগত ভারসাম্য ও কৃষি। এলাকাবাসী নদীটি খননের জন্য এলাকাবাসী সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী জানাচ্ছেন।
