ভারতের অন্তর্ভূক্ত হওয়ার আগ থেকে অথ্যাৎ ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ত্রিপুরা শাসন করেছিলেন রাজা মানিক্য রাজবংশ। প্রায় আড়াই হাজার বছর ধরে এই রাজবংশের ১৮৬ জন রাজা ত্রিপুরা শাসন করেন। এক সময় প্রচুর পরিমান সুগন্ধি আগর গাছে ভরপুর ছিল ওই এলাকা। মূলতঃ আগর গাছ থেকে নামকরণ হয় আগরতলা রাজ্যের। ত্রিপুরা আগরতলা ঐতিহ্য ঘেরা একটি শহর। প্রাচীন রাজাদের আদি নিবাস। এই ত্রিপুরা শহরজুড়েই রয়েছে রাজাদের বিভিন্ন নিদর্শন।
আগরতলার প্রাণকেন্দ্রে আনু মানিক ২০ একর জমির উপর ১৮৯৯ থেকে ১৯০১ সালে আনুমানিক ১২৩ বছর আগে তৎকালিন ১০ লক্ষ (১ মিলিয়ন) টাকা ব্যয় করে বর্তমান প্রাসাদটি প্রতিষ্ঠা করেন মহারাজা রাধা কিশোর মাণিক্য। খুব পরিস্কার ও পরিচ্ছন রাজবাড়ির নিচে আর উপরে রয়েছে সুন্দর পরিপাটি সাজানো জাদুঘর। জাদুঘরটিতে আছে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যগুলো প্রত্নতত্ত্ব ও চারুশিল্পের অনেক নির্দশন। জাদুঘরের প্রত্নতত্ত্ব বস্তুর পাশে লেখা আছে ত্রিপুরা জাতির নিজস্ব ভাষা ককবরক, বাংলা ও ইংরেজি বিবরণ।
একই সাথে বিভিন্ন গ্যালারিতে সাজানো রয়েছে দেবদেবীর মূর্তি, মৃৎশিল্প, পোড়া মাটি ও ব্রোঞ্জ নির্মিত মূর্তি। সোনা-রুপা ও তামার মুদ্রাসহ তৈলচিত্র, বস্ত্র, অলঙ্কারও আছে। আদিম যুগের বেশ কিছু শিলালিপি ও সাজানো আছে সাথে বিভিন্ন মানচিত্রও। আছে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী সংস্কৃতির অংশ বিশেষ।
তবে সবচেয়ে আকর্ষণ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের গ্যালারিতে। এই গ্যালারিতে রয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে থেকে ভারতে প্রবেশ করা শরর্ণাথীদের বিভিন্ন দূর্লভ ছবি। আছে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ পরিবারের সকলের ছবি।
ছবিগুলোতে ফুটে উঠে শরর্ণাথীদের তৎকালিন দুর্দশার চিত্র। ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও অপারেশনসহ যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাকের প্রকাশিত সংবাদ, ৭ মার্চের ভাষণের প্রতিকৃতি সাজানো রয়েছে গ্যালারিতে। পুরো রাজবাড়ি ঘুরে সাথে জাদুঘরে বিভিন্ন জিনিস দেখে ভারতের বিভিন্ন সংস্কৃতি সম্পর্কে সহজেই জানা যাবে।
রাজবাড়িতে প্রবেশ মূল্য ভারতীয়দের জন্য ৪০ রুপি এবং বাংলাদেশী পর্যটকদের জন্য ১০০ রুপি দিতে হয়। কড়াকড়ি নিষেধাজ্ঞা আছে যাদুঘরের ভেতরে ছবি কিংবা ভিডিও করার বিষয়। নিষেদাজ্ঞা জ্ঞাত হয়েও কেউ কোন ছবি তুললে গুণতে হয় মোটা অঙ্কের জরিমানা।
আগরতলা থেকে ফিরে,
তারেক হাবিব
বার্তা সম্পাদক
দৈনিক আমার হবিগঞ্জ।
